ফেনী সদরের পাঁচগাছিয়ার তেমুহনী থেকে রাজাপুরের দক্ষিণ দিলপুর পর্যন্ত আঞ্চলিক সড়ক সংস্কারে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যার পর একই সড়ক সংস্কারে দুই দফায় বরাদ্দ দেওয়া হলেও কাজের মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুরোনো কার্পেটিং মেশিন দিয়ে ভেঙে তা দিয়ে সড়ক সংস্কার করা হয়েছে। ফলে সড়কের স্থায়িত্ব টেকসই হয়নি। এছাড়া পানি নিষ্কাশনে সড়কে রাখা হয়নি নয়নজুলি। তবে দরপত্রের শর্তানুযায়ী সংস্কার কাজ করা হয়েছে। এতে কোন অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করছেন ফেনী সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা।

সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বন্যার পর প্রথম দফায় তেমুহনী থেকে রাজাপুর পর্যন্ত সড়ক মেরামতের জন্য ফেনী সড়ক বিভাগ থেকে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। চলতি বছরে একই সড়কের ৩ দশমিক ৯ কিলোমিটার অংশ সংস্কারে দ্বিতীয় দফায় আরও ৯ কোটি ৫৮ লাখ ৯২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কাজটি পায় ভোলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শহীদ ট্রেডার্স। তবে প্রতিষ্ঠানটি মো. আতিকসহ ফেনীর কয়েকজন স্থানীয় ঠিকাদারের কাছে তা বিক্রি করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

সড়ক বিভাগের তথ্যমতে, প্রকল্পের আওতায় রাজাপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে রাজাপুর পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার সড়কে আরসিসি ঢালাই এবং রতনপুর লাকীদের বাড়ি থেকে দক্ষিণ দিলপুর পর্যন্ত বিটুমিন কার্পেটিং করা হয়েছে। চলতি বছরের নভেম্বরের শেষদিকে বিটুমিন ও আরসিসি ঢালাই কাজ শেষ হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিল উত্তোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিল তোলার জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।

এলাকাবাসীরা অভিযোগ করেন, এটি ফেনী-সোনাইমুড়ি বিকল্প আঞ্চলিক সড়ক হিসেবে পরিচিত। এ সড়ক ব্যবহার করে তেমুহনী, বিরলী, রাজাপুর, সিন্দুরপুর ও দরবেশের হাট এলাকার মানুষ চলাচল করে থাকেন। সড়কটি সংস্কার করা হলেও সড়কে নয়নজুলি নেই। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, সড়কটি সংস্কার করা হলেও কোথাও নয়নজুলি রাখা হয়নি। অনেক স্থানে পথচারীদের জন্য আলাদা চলাচলের জায়গাও নেই। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে।

স্থানীয়দের দাবি, পুরোনো কার্পেটিং মেশিন দিয়ে ভেঙে তা পুনরায় কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে সড়কের স্থায়িত্ব কমে যাওয়ার সম্ভব রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, কার্পেটিংয়ে নিয়ম অনুযায়ী ছোট ও মাঝারি পাথর ব্যবহারের কথা থাকলেও কিছু স্থানে বড় পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। নির্ধারিত উচ্চতায় সড়ক উঁচু করা হয়নি, যার ফলে বন্যা হলে সড়কটি আবারও পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রাজাপুর ব্রিজের ওপর কোনো সংস্কার কাজ হয়নি। সেখানে এখনো ছোট-বড় গর্ত রয়েছে। এলাকাবাসী সড়ক প্রশস্তকরণের দাবি জানালেও তা কার্যকর হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাবেক সহসভাপতি ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক সংস্কার হলেও নয়নজুলি রাখা হয়নি। এ এলাকার অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। নয়নজুলি না থাকায় ফসলি জমির পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হবে। সড়কের অনেক স্থানে পথচারীদের হাঁটার জন্য জায়গা না থাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। ২০২৪ সালের বন্যার পর এ সড়ক মেরামতের জন্য প্রায় ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার প্রকল্প বরাদ্দ দেওয়া হয়।

সিএনজি অটোরিকশাচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন সড়কটি অবহেলিত ছিল। বন্যার পর দুই দফায় সংস্কার হলেও পুরোনো কার্পেটিং তুলে তা আবার ব্যবহার করা হয়েছে।’

আবুল হাশেম নামে ফেনী পশ্চিমাঞ্চল কমিউনিটির এক সদস্য জানান, ফেনী শহরে যাতায়াতের জন্য এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ চলাচলে মাধ্যম হচ্ছে ফেনী-সোনাইমুড়ি বিকল্প সড়ক। এমনকি সেনবাগের মানুষও এ সড়ক ব্যবহার করে থাকে। সড়ক সংস্কারে দুই দফা টেন্ডার হলেও কাজ মানসম্মত হয়নি। সড়কটি আগের অবস্থায় রূপ পেতে পারে। এতে মানুষ আবারো ভোগান্তিতে পড়বে। এজন্য সড়ক বিভাগের সঠিক তদারকির দরকার ছিল।

এ বিষয়ে ফেনী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘দরপত্র অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। কোনো অনিয়ম হয়নি।’ সড়কে নয়নজুলি না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার দায়িত্ব নেওয়ার আগেই কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল। সে কারণে নয়নজুলি অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ভবিষ্যতে বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে।’

‘৫০ বছরে সড়কের কিছু হবে না’

ফেনী সদরের পাঁচগাছিয়ার তেমুহনী থেকে দাগনভূঞার রাজাপুর আঞ্চলিক সড়ক সংস্কারে অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে ফেনী সড়ক বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল বাতেন বলেন, সড়কে সংস্কারে কোন অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়নি।দরপত্রে উল্লিখিত শর্তানুযায়ী সংস্কার কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। যে পরিমাণ কাজ করা হয়েছে তাতে সড়কটি ৫০ বছরেও কিছু হবে না।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এ সড়কটি সংস্কারে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা অস্থায়ী কাজের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আবার বিরলী থেকে দক্ষিণ দিলপুর পর্যন্ত ৩.৯ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারে ৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। নয়নজুলি দরপত্রে উল্লেখ না থাকায় সেটি করা হয়নি। তবে সড়কে কয়েকটি কালভার্ট রয়েছে। সড়কে এজিং না দেয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন বিটুমিনের সড়কে এজিং দেয়ার প্রয়োজন নেই।