দীর্ঘ নির্বাসনের অবসান ঘটিয়ে প্রায় ১৭ বছর পর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে সারা দেশের ন্যায় ফেনী বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যেও উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। দলীয় নেতাকর্মীদের ঢাকামুখী যাত্রা স্থানীয় রাজনীতিতে যোগ করেছে নতুন মাত্রা।
জেলা বিএনপি সূত্র জানা যায়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষ্যে ফেনী বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ৫০ হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় যাবেন। এ নিয়ে ইতোমধ্যে যৌথ সভা করা হয়েছে। জেলার তিনটি সংসদীয় আসনের মধ্যে ফেনী-১ আসনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক রফিকুল আলম মজনু, ফেনী-২ আসনে অধ্যাপক জয়নাল আবেদিন ও ফেনী-৩ আসনে আবদুল আউয়াল মিন্টু বিষয়টি তদারকি ও আর্থিক সহযোগিতা করছেন। নেতাকর্মীরা মঙ্গলবার রাত থেকেই গণপরিবহনে ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ঢাকায় রওনা হয়েছেন। কেউ কেউ আগেভাগেই ঢাকায় পৌঁছে আত্মীয়-স্বজনের বাসায় কিংবা হোটেলে অবস্থান নিচ্ছেন।
জেলা বিএনপির আহবায়ক শেখ ফরিদ বাহার বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আগমন ঘিরে ফেনী বিএনপির নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বসিত। ইতোমধ্যে জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে যৌথসভা করা হয়েছে। জেলা থেকে অন্তত ৫০ হাজার নেতাকর্মী ঢাকা যাওয়ার বিষয়ে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু নেতাকর্মীদের উদ্দীপনায় ধারণা করছি এ সংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে। পরিবহন নিয়ে সুনির্দিষ্টতা না থাকলেও বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ব্যক্তিগত উদ্যোগেও নেতাকর্মীরা বাস, মাইক্রোবাস ও ট্রেনযোগে ঢাকা যাচ্ছেন। আগামীতে মানুষ এই দিনটিকে ঐতিহাসিক দিবস হিসেবে পালন করবে। ফেনীর তিনটি সংসদীয় আসনের দলীয় প্রার্থীরা পুরো বিষয়টি তদারকি ও আর্থিক সহযোগিতা করছেন।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নেতা দেশে ফিরছেন। আমাদের কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি দেশের বাইরে থেকে সবসময় যোগাযোগ করতেন। ফেনী বিএনপির আজকের এ অবস্থানের পেছনে মূল শক্তি তারেক রহমান। তিনিই নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত ও ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন। আমি কারাগারে থাকা অবস্থায়ও মুঠোফোনে আমার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাহস জুগিয়েছিল। মঙ্গলবার বিকেল থেকেই নেতাকর্মীরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।
এদিকে, দলের শীর্ষ এ নেতার দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনীতি ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মন্তব্য করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এ প্রসঙ্গে ফেনী জেলা যুবদলের আহবায়ক নাসির উদ্দিন খন্দকার বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘ সময় দেশের বাইরে থেকে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রেখে যোগাযোগ রক্ষা করে প্রাসঙ্গিক রাজনীতি করে গেছে। আওয়ামী লীগ এ দলকে ভাঙা বা শেষ করে দেওয়ার জন্য বারবার ষড়যন্ত্র করলেও বিএনপি নেতাকর্মীদের ত্যাগ-নির্যাতন শিকারের মুখে ব্যর্থ হয়েছেন। বিএনপি বরাবরই দেশের ক্রান্তিলগ্নে পাশে ছিল। সর্বশেষ হাসিনা ফ্যাসিজমের উৎখাতের পরও আমরা প্রত্যাশিত রাষ্ট্র পাইনি। তারেক রহমানের নেতৃত্বেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চলমান মবতন্ত্র থেকে দেশ রক্ষা পাবে বলে আশাকরি।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সাইদুর রহমান জুয়েল বলেন, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষ্যে ইতোমধ্যে সভা করা হয়েছে। তিনটি সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে নেতাকর্মীরা ঢাকায় যাচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে এ উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা অনেক বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এবার নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সালাউদ্দিন মামুন বলেন, ছাত্রদলের অন্তত ১০ হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় যাবেন। নেতাকর্মীরা আসনভিত্তিক পৃথকভাবে গন্তব্যে যাবেন। এতে আমাদের পক্ষ থেকে সমন্বয় করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তারেক রহমান গ্রেপ্তার হন। পরে ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি জামিনে মুক্তি পান এবং চিকিৎসার জন্য ১১ সেপ্টেম্বর লন্ডনে পাড়ি জমান। সেই থেকে তিনি পরিবারসহ সেখানেই অবস্থান করছেন। লন্ডন থেকেই তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারান্তরীণ হওয়ার পর ২০১৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি লন্ডনে বসেই দলের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘ ১৭ বছর পর আগামী ২৫ ডিসেম্বর তিনি দেশের মাটিতে পা রাখবেন, যার মাধ্যমে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে।

অন্যদিক, গতকাল মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) তারেক রহমানের এ আগমন উপলক্ষ্যে ফেনী জেলা বিএনপির আওতাধীন বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা আনন্দ মিছিল করেছে।